কক্সবংলা ডটকম(১৬ ফেব্রুয়ারি) :: সাধারন শেয়ারহোল্ডারদের জন্য নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেও পুঁজিবাজারের তালিকাভূক্ত ৪৯ কোম্পানীকে ছাড় দিল পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
এর ফলে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ওই কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ না দেওয়ার পরও আপাতত ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত হচ্ছে না।
পরবর্তী লভ্যাংশের ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত শ্রেণি পরিবর্তন হবে না তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এ নিয়ে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে।
বিএসইসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন ছাড়া শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানিকে নিয়মনীতি পরিপালন না করার (নন কমপ্লায়েন্স) জন্য জেড শ্রেণিভুক্ত করতে পারবে না কোনো স্টক এক্সচেঞ্জ।
এ ধরনের পরিস্থিতিতে কোনো কোম্পানির শ্রেণি পরিবর্তন করতে হলে আগে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন নিতে হবে।
বিএসইসি বলছে, তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি পরপর দুই বছর লভ্যাংশ না দিলে, বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) না করলে সেই কোম্পানিকে দুর্বল মানের কোম্পানি হিসেবে জেড শ্রেণিভুক্ত করা হবে।
তবে ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যান্য কোম্পানির ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশকে শ্রেণি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নিতে হবে।
এ ছাড়া কোনো কোম্পানির উৎপাদন কার্যক্রম ছয় মাস বা তার বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকলে সেটিও জেড শ্রেণিভুক্ত হবে। তবে এ ক্ষেত্রে কারখানা আধুনিকায়নের ঘোষণা দিয়ে কোনো কোম্পানি উৎপাদন বন্ধ রাখলে তাদের ক্ষেত্রে এ শর্ত কার্যকর হবে না।
আবার তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির রিটেইনড আর্নিংস ওই কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের বেশি হলে সেটিও জেড শ্রেণিভুক্ত হবে।
বিএসইসি বলেছে, শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্য থেকে জেড শ্রেণিভুক্ত করার যে বিধান করা হয়েছে, তা সামনের লভ্যাংশ ঘোষণার পর থেকে কার্যকর হবে। এর ফলে আপাতত কোনো কোম্পানি জেড শ্রেণিভুক্ত হবে না।
সাধারণত শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো জুন ও ডিসেম্বর শেষে লভ্যাংশ ঘোষণা করে থাকে।
যেসব কোম্পানির আর্থিক বছর জুলাই-জুনভিত্তিক, তারা লভ্যাংশ ঘোষণা করে অক্টোবরের মধ্যে। আর যেসব কোম্পানির আর্থিক বছর ডিসেম্বরে শেষ হয়, সেগুলো লভ্যাংশ ঘোষণা করে এপ্রিলের মধ্যে। আর্থিক বছর শেষ হওয়ার চার মাসের মধ্যে লভ্যাংশ ঘোষণার বিধান রয়েছে।
বিএসইসির নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া শেয়ারবাজারের জেড শ্রেণিভুক্ত কোনো কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালক নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন ছাড়া শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়, হস্তান্তর করতে পারবেন না।
শেয়ারবাজার বা শেয়ারবাজারের বাইরেও এসব উদ্যোক্তা-পরিচালকের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় ও হস্তান্তরে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।
কয়েক দিন ধরে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে গুজব ছিল, অর্ধশতাধিক কোম্পানি জেড শ্রেণিভুক্ত হতে যাচ্ছে। এ গুজবকে ঘিরে শেয়ারবাজারে কয়েক দিন দরপতনও ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা নতুন নির্দেশনা দিয়ে বিষয়টি স্পষ্ট করেছে।
সূত্র মতে, বেশকিছু আলোচিত-সমালোচিত কোম্পানি লভ্যাংশ না দিয়েও ‘বি’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করছে। এমন কোম্পানির সংখ্যা ৩৯টি। কোম্পানিগুলো হচ্ছে আলোচিত-সমালোচিত- খান ব্রাদার্স, খুলনা প্রিন্টিং, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, ইনটেক লিমিটেড, কেয়া কসমেটিকস, এক্টিভ ফাইন, এএফসি এগ্রো বায়োটিক লিমিটেড, আলহাজ টেক্সটাইল, অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, আনলিমা ইয়ার্ন ডাইং, আরামিট সিমেন্ট, এটলার্স্ট বাংলাদেশ, আজিজ পাইপস, বঙ্গজ, বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস (বিবিএস), বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম, ঢাকা ডাইং, ডেল্টা স্পিনিং, ফার কেমিক্যাল, ফাস ফাইন্যান্স, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, মেট্রো স্পিনিং, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ, ন্যাশনাল ফিড মিল, ন্যাশনাল টি, ন্যাশনাল টিউবস, অলিম্পিক এক্সেসরিজ, ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোড, পেনিনসুলা চিটাগং, প্রাইম টেক্সটাইল স্পিনিং মিলস, রিজেন্ট টেক্সটাই, সাফকো স্পিনিং, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপিয়ার্ড এবং জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
এদিকে লভ্যাংশ না দিয়েও ‘এ’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করছে এমন কোম্পানির সংখ্যা ১০টি। কোম্পানিগুলো হচ্ছে- কাট্টলী টেক্সটাইল, ম্যাকসন স্পিনিং, মালেক স্পিনিং, নিউ লাইন ক্লোথিংস, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, রিং সাইন টেক্সটাইল, রানার অটোমোবাইলস পিএলসি, সাইফ পাওয়ারটেক, সায়হাম কটন মিলস এবং সায়হাম টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড।
‘জেড’ ক্যাটাগরি সংক্রান্ত বিএসইসির ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর জারি করা আদেশে বলা হয়েছিল, পরপর দুই বছর নগদ লভ্যাংশ প্রদান কিংবা বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করতে ব্যর্থ হলে কমিশনের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ‘জেড’ গ্রুপে স্থানান্তর করা যাবে। তাছাড়া ৬ মাস বা তার বেশি সময় কোম্পানির উৎপাদন বা কার্যক্রম বন্ধ থাকলে, পরপর দুই বছর নিট পরিচালন লোকসান অথবা পরিচালন কার্যক্রম থেকে নগদ প্রবাহ ঋণাত্মক থাকলে অথবা কোম্পানির পুঞ্জীভূত লোকসান তার পরিশোধিত মূলধনের বেশি হলে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরিত হবে।
এতে আরও বলা হয়, আইনি কারণে এজিএম করতে না পারলে কিংবা সংস্কার, বিএমআরই ও দৈব দুর্ঘটনাজনিত কারণে ছয় মাসের বেশি উৎপাদন বন্ধ থাকলে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হবে না। এছাড়া সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের কারণে কমিশনের অনুমতিক্রমে স্টক এক্সচেঞ্জ কোনো তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করতে পারবে। স্টক এক্সচেঞ্জ এসব বিধান পরিপালন করা হচ্ছে কিনা সেটি নিয়মিতভাবে পর্যালোচনা করবে এবং বিএসইসির পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে কোনো কোম্পানিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর বা সমন্বয় করতে পারবে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোন কোম্পানি পরপর দুই বছর লভ্যাংশ ঘোষণায় ব্যর্থ হলে তাকে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হবে। একইসাথে টানা দুবছর বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএম করতে ব্যর্থ হলেও কোম্পানির ক্যাটাগরি পরিবর্তন করে জেড ক্যাটাগরিতে পাঠানো হবে। তবে এজিএম অনুষ্ঠিত না হওয়ার ক্ষেত্রে যদি কোন রিট পিটিশন বা আদালতে বিচারাধীন কোন আইনি প্রক্রিয়া থাকে তাহলে জেড ক্যাটাগরিতে পাঠানোর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২ বছরের জন্য বিবেচনা করা হবে।
এছাড়া, উৎপাদনহীন কোম্পানি নিয়েও কড়া নির্দেশনা দিয়েছে বিএসইসি। এখন থেকে কোন কোম্পানি টানা ৬ মাস তার কার্যক্রম পরিচালনা থেকে বিরত থাকলে বা উৎপাদন বন্ধ রাখলে সেটিকেও জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হবে। পাশাপাশি কোন কোম্পানির টানা দুই বছর ক্যাশ ফ্লো নেতিবাচক আসলে এবং পরিশোধিত মূলধনের থেকে ঋণ বেশি হলে তাকেও স্থান দেওয়া হবে জেড ক্যাটাগরিতে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, কোন কোম্পানি সিকিউরিটিজ আইন, বিধি-বিধান, বিজ্ঞপ্তি, আদেশ কিংবা নির্দেশাবলী পালনে ব্যর্থ হলে বা অসম্মতি জানালে সেটিকেও কমিশনের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হবে।
নিয়মানুযায়ী, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বিমা এবং নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া যেকোন তালিকাভুক্ত কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ (স্টক/বোনাস শেয়ার ব্যতীত) প্রদান করতে পারে। নতুন নিয়ম মোতাবেক, কোম্পানির ক্যাটাগরি নির্ণয়ে অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ বিবেচনা করা হবে।
এছাড়া, ব্যাংক, বিমা এবং নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যতীত কোন কোম্পানি যদি ইতোমধ্যে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরিত হয়, তবে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা বা পরিচালক কমিশনের পূর্বানুমোদন ছাড়া কোম্পানিটির কোন শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় বা স্থানান্তর করতে পারবে না বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
নতুন এই নির্দেশনার ফলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (লেনদেনের নিষ্পত্তি) প্রবিধান, ২০১৩ এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (লেনদেনের নিষ্পত্তি) প্রবিধান, ২০১৩ এর প্রবিধান নং ৫(২) এর বিধানগুলি রহিত হবে। এসব বিধানের জায়গায় আজকের নতুন নির্দেশনা কার্যকর হবে।
এর আগে, ‘জেড’ ক্যাটাগরি সংক্রান্ত বিএসইসির ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর জারি করা আদেশে বলা হয়েছিল, পরপর দুই বছর লভ্যাংশ প্রদান কিংবা বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করতে ব্যর্থ হলে কমিশনের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ‘জেড’ গ্রুপে স্থানান্তর করা যাবে। তাছাড়া ৬ মাস বা তার বেশি সময় কোম্পানির উৎপাদন বা কার্যক্রম বন্ধ থাকলে, পরপর দুই বছর নিট পরিচালন লোকসান অথবা পরিচালন কার্যক্রম থেকে নগদ প্রবাহ ঋণাত্মক থাকলে অথবা কোম্পানির পুঞ্জীভূত লোকসান তার পরিশোধিত মূলধনের বেশি হলে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরিত হবে।
এতে আরও বলা হয়, আইনি কারণে এজিএম করতে না পারলে কিংবা সংস্কার, বিএমআরই ও দৈব দুর্ঘটনাজনিত কারণে ছয় মাসের বেশি উৎপাদন বন্ধ থাকলে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হবে না। এছাড়া সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের কারণে কমিশনের অনুমতিক্রমে স্টক এক্সচেঞ্জ কোনো তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করতে পারবে। স্টক এক্সচেঞ্জ এসব বিধান পরিপালন করা হচ্ছে কিনা সেটি নিয়মিতভাবে পর্যালোচনা করবে এবং বিএসইসির পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে কোনো কোম্পানিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর বা সমন্বয় করতে পারবে।
গত বছরের ৩০ নভেম্বর আগের নির্দেশনা রদ করে আরেকটা নির্দেশনা জারি করে বিএসইসি। বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম স্বাক্ষরিত নোটিফিকেশনে জেড ক্যাটাগরির বিষয়ে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সেটলমেন্ট অব ট্রানজেকশন্স বিধিমালা অনুসারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে সাথে সাথে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করতে পারবে। ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএসইসির জারি করা আদেশের কারণে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ যেসব কোম্পানিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করতে পারেনি, সেগুলোকেও এখন স্থানান্তর করা যাবে।
Posted ৯:৫৮ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta